” উত্তম পুরুষ ” গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ন এর এই নাটকে সকলের প্রাণবন্ত অভিনয় বড় সম্পদ

Spread the love



ইন্দ্রজিৎ আইচ

সম্প্রতি গোবরডাঙ্গা শিল্পায়ন তাদের নতুন নায়ক উত্তম পুরুষ মঞ্চস্থ করলো দিপা ব্রহ্ম মঞ্চে।
শিল্পায়নের উত্তম পুরুষ বিশেষ কোন ইজমের দ্বারা চালিত হলে সত্য মার খায়। স্রষ্টা সত্য দ্রষ্টা। ভূমি থেকে ভূমাতে উত্তীর্ণ হলে সৃষ্টি সমেত তার নব জন্ম ঘটে।আশিস চট্টোপাধ্যায় নতুন পথের কারিগর।মধ্যম বা প্রথম নন,,একেবারে উত্তম পুরুষের  মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়েছেন।জয়বন্ত দলভির লেখা একটি মারাঠি নাটককে  বাংলা এবং হিন্দি  ভাষায় অনুবাদ করেছেন তিনি ।।স্বাধীনতার এত বছর পরেও যে প্রশ্নের সমাধান রাষ্ট্র করে উঠতে পারেনি,অথচ করা উচিত ছিল, পরিচালক সেই প্রশ্নগুলিকেই অত্যন্ত নিপুন দক্ষতায়  তুলে ধরেছেন । প্রিয়েন্দু শেখর দাস, সৌরভ দাসকে সঙ্গে নিয়ে যে ভাবে মঞ্চটিকে সাজিয়েছেন,তা যথেষ্ট প্রশংসার দাবী রাখে।জীবনের ছোটো ছোটো চাহিদাগুলি প্রকাশের ক্ষমতা আমাদের সব সময় থাকেনা। ন্যায়ের পরাজয় দেখে অসহায় মানুষ কেবল অবাক হন।।রাজু ভট্টাচার্য ,তাপস দত্ত চৌধুরী এবং গৌর নন্দীর আলোক প্রক্ষেপণ চরিত্রের নিহিত ভাব প্রকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

রাষ্ট্র চিরকাল  সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদাকে নিয়ে ছেলে খেলা করে । ব্যক্তির  অর্জনকে দয়ার দানে পরিণত করতে চায়। অর্থ আর ক্ষমতার জোরে গুলাব সিংহের মতো মানুষেরা সব কিছু  কিনে নিতে চায়।সামান্য প্রতিরোধেই তছনছ করে দিতে পারে সাজানো সংসার। এদশে ধর্ষকের বিচার হয়না। অসহায়  বাবা কেঁদে  ফেরেন আইনের দোরে দোরে। পুলিশের ভূমিকা দেখে হতবাক হতে হয়।

ঘরে কি মেয়ে আছে?হ্যাঁ,  আপনাকেই বলছি।মঞ্চের পরে একটি ধর্ষিতা মেয়ের আর্ত চিৎকার শুনে আপনি অস্থির হয়ে উঠবেন। শয়তান গুলাব সিংহের অভিনয় ক্ষমতায় মুগ্ধ হবেন। সৌভিক সরকার আর তানিশা রায়ের অনবদ্য অভিনয় ক্ষমতায় মুহূর্তের জন্য ভুলে যাবেন ওরা আপনার পরিচত অভিনেতা মাত্র! সৌভিক অভিনয়ে অনেক দুর যাবেন। অম্বিকা চরিত্রে তানিশা রায় বিপুল সম্ভাবনা ময়।

মনে হবে নারকীয় রাষ্ট্র যন্ত্রের নীচে আপনার সন্তানই চাপা পড়েছে।! আন্দোলনের অজুহাতে  জাতের  নামে বজ্জাতি চলে দেশ জুড়ে। সৌরভ দাসের সাবলীল অভিনয় আপনাকে পথ দেখাবে। অম্বিকাকে ভালোবাসতো চরিত্রটি। অম্বিকার চাকরির অর্থেই পিছিয়ে পড়া শ্রেণির উন্নয়নে লড়াই করার স্বপ্ন দেখতো। দুর্দিনে সেও বিকিয়ে যায়।


যদিও বিবেক কেনা অত সহজ নয়।জয়ার সাথে নিজের বিশ্বাস একাকার হয়ে গলে বুঝতে পারবেন অভিনেত্রী  নিভা বিশ্বাস অনেক দূর যাবেন। মায়ের ভূমিকায় মৌসুমি চক্রবর্তীর অভিনয় দক্ষতা অতুলনীয়।মঞ্চের পরে তার ঝলমলে  বিচরণে মনে হবে পর্দায় কোনো সিরিয়াল দেখছেন।আলোর ব্যবহার, কিংবা দৃশ্যান্তরগুলিকে অপূর্ব শৈল্পিক দেহ কাঠামোয়  সাজানো হয়েছে।

পান্ডেদের মতো দলদাসদের দেখে ঘৃণা হবে।। যারা নেতাকে বাঁচাতে সব দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারে। এক পংক্তিতে বসে হাথরস,মনিপুর আর জি কর জোর ধাক্কা দিয়ে আপনাকে বিহ্বল করে তুললে আপনি চোয়াল দৃঢ় করবেন। বুঝবেন মানুষ আশায় বাঁচে।টের পাবেন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে  কাঁদে না। বরং অর্থ আর ক্ষমতার পায়ে মাথা ঠুকে চিৎকার করে  মরছে সে বিচারের অসহনীয় রূপ দেখে ধর্ষিতা কন্যার পিতা আত্মহত্যা করে বসেন। কৌশলে শয়তানকে আইনের হাতে তুলে দেবার বুদ্ধি আটে জয়া আর অম্বিকা।কিন্তু ধুরন্ধর শয়তানের সঙ্গে  তারা পারবে কেন!ধরা পড়ে যায়।গুলাব সিংহের হাত থেকে রেহাই মিলবে কি ওদের? দিশেহারা হয়ে যখন নিজেকেই প্রশ্নটি করতে যাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় গুলির শব্দে প্রাণ কেপে উঠবে আপনার। দেখবেন বিধবা মা আইন হাতে তুলে নিয়েছেন।গুলিতে ঝাঝরা হয়ে গিয়েছে ধর্ষক গুলাব সিংহ!দল, উকিল, মানবিধিকার, বিদেশ নীতি এসবের কচকচানি ছাড়াই এমন নির্ভেজাল বিচারের ছবি দেখে লাফিয়ে উঠবেন!দু ফোটা আনন্দ অশ্রু ঝরেপড়লে বুঝবেন লোভ লাভ আর ক্ষমতার অন্ধ গলিতে আলো ফেলেছেন আশিসবাবু। সেই আলোতে নিজেকে দেখার এমন সুযোগ কমই আসে।

Author