মঞ্চস্থ হলো প্রত্যাবর্তন নাট্য গোষ্ঠীর এক দুঃসাহসিক প্রযোজনা “মৃত স্বপ্নরা”

0
Spread the love



ইন্দ্রজিৎ আইচ

প্রত্যাবর্তন নাট্য গোষ্ঠী সবসময় সমাজ ভাবনার বিষয় নিয়ে নাটক করে। এবারও তাদের নতুন নাটক “মৃত স্বপ্নরা” মঞ্চস্থ করলো গত ১৯ অক্টোবর রবিবার দক্ষিণ কলকাতার যোগেশ মাইম আকাদেমিতে।


এই নাটকের অন্তর দর্শনে আমরা দেখতে পাই
চাকরি হারা প্রতিবন্ধী অনিরূদ্ধ তার অবলম্বন ক্রাচ দুটি নিয়ে ভোরবেলা থেকে দুধ-খবরের কাগজ বাড়ি বাড়ি দিয়ে আর পরবর্তী সময় থেকে রাত পর্যন্ত কমল দার চা এর দোকানে কাজ করে মাতৃহারা একমাত্র সন্তান কৌশানী কে বড় করে তোলার উদ্দেশ্যে জীবন অতিবাহিত করে চলেছে। কৌশানীও মা এর অভাব মাঝে মাঝে অনুভব করলেও বাবার এই পরিশ্রমকে মা এর থেকে কোনো অংশে কম মনে করে না। অনিরূদ্ধর আদর্শে অনুপ্রাণিত পাড়ারই এক যুবক সৌম্যদীপ তাদের পরিবারের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। পরিক্ষা দিয়ে সরাসরি লাল বাজারে পুলিশের চাকরিটা পেয়ে যাওয়ার খবরটা অনিরূদ্ধকে জানালে অনিরূদ্ধ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। সবের মধ্যেই অনিরূদ্ধ ভেতরে একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত লাভা টগবগ করে ফুটতে থাকে। যার ফলস্বরূপ পূর্ব পরিকল্পনা ও কৌশলে অনিরূদ্ধ উপস্থিত হয় শিক্ষা মন্ত্রী মনোময় লাহিড়ী র বাড়িতে। অযোগ্যের তালিকায় পড়ে নিজের অস্তিত্ব, যোগ্যতা, পরিচয়, পরিবার হারিয়ে ফেলা অনিরূদ্ধ তার কৌশলের জালে মনোময় লাহিড়ী কে জড়িয়ে ফেলে, গৃহবন্দি করে তাকে করে তোলে দিশে হারা। যুক্তি-তক্কের পারদ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় তখন নিজের কন্যা রিমলী মারফৎ মনোময় জানতে পারে স্কুলের বাইরে তার ভাই রিমো কিডন্যাপট হয়েছে। মায়ের পরিবার থেকে বিমুখ হয়ে যাওয়া, সন্তানদের প্রতি উদাসীনতা আর রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতায় সমাজে আড়াল থেকে কটু উক্তি শোনার কারনে বাবার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে রিমলী। একের পর এক কথার তিরে ক্ষত বিক্ষত মনোময় ভেঙে পড়ে স্বীকার করে নিজের অপারগতা, না চাইলেও রাজনৈতিক অঙ্গুলি নির্দেশে তাদের চলতে হয়। এদিকে চক্রান্তের হদিশ পাওয়ায় সদ্য পুলিশের চাকরিতে যুক্ত হওয়া সৌম্যদীপের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় গোটা রাকেট কে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার।

অপরদিকে মনোময়ের অন্তরাত্মা জাগ্রত হয়, বুঝতে পারে সাধারণ মানুষের এ সমাজে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন। ফিরে আসে তার পুত্র রিমো। অপহরণ করে অপহরণকারীরা যে তাকে সুশিক্ষাই দিয়েছিল, সেটা জানতে পারে। আইন বিরোধী কাজের ফলে সর্বহারা শিক্ষক অনিরূদ্ধ বুঝতে পারে তার অন্তিম পরিণতি কী হতে চলেছে |

রাতটুকু মেয়ের সাথে কাটায় অনিরূদ্ধ। জীবনানন্দ আবৃত্তি করতে করতে ভোরের আলো ফুটে সকাল হয়। আদর্শ আর কর্তব্যের টানাপোড়েনে সৌম্য মনের বিরুদ্ধে গিয়ে গ্রেফতার করতে চলে আসে অনি দা কে। অকষ্মাৎ উপস্থিত হওয়া শিক্ষা মন্ত্রী মনোময় লাহিড়ীর বারন সত্বেও, সুশিক্ষা কে বাঁচিয়ে রাখতে নিজেকে আইনের হাতে তুলে দেয় অনিরূদ্ধ। যাওয়া আগে মনোনয়ন বাবুকে অনিরূদ্ধ বলে যায়, শিক্ষক আর শিক্ষকে না বাঁচালে সমাজে ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে, আর তখনই হাজারো মৃত স্বপ্নদের মিলিত কন্ঠের চিৎকার গর্জে উঠবে….! এ নাটকটি মঞ্চায়নে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

এই নাটকের ভাবনা, আবহ, মঞ্চ, নাটক ও নিদের্শনা অনিমেষ তরফদার। আবহ, আলো ও রূপসজ্জায় বিশেষ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন দিগ্বিজয় বিশ্বাস, মলয় চ্যাটার্জী এবং সেক ইব্রাহীম। চমৎকার অভিনয় করেছেন অনিরুদ্ধ র ভূমিকায় অনিমেষ তরফদার ও শিক্ষা মন্ত্রী মনোময় লাহিড়ী র চরিত্রে গৌতম শিকারী। সৌম্যদীপ এর চরিত্রে শোভন সরকার ও আশীষ বিক্রম এর নিজের চরিত্রে যথাযথ। অভিনয়ে অন্য মাত্রা যোগ করেছে কঙ্কনা ব্যানার্জী, শিশু শিল্পী কৌশানী বসু ও অরিশ তরফদার। আনুমানিক পৌনে দুই ঘণ্টার এই নাটক মৃত স্বপ্নরা সকল দর্শকদের নজর কাড়ে।

Author

Leave a Reply