এক সম্পর্কের বন্ধনের গল্প ল্যাপটপ- এ লকডাউন ফিল্ম

Spread the love

করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক আর দীর্ঘ লকডাউনে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে মানুষ।সামাজিক দূরত্ব, ঘরবন্দির জাঁতাকলে পড়ে একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেটেছে দীর্ঘদিন। মানসিক দুরত্বও এসেছে চুপিসারে। ফলসরূপ চড়েছে একাকিত্বের পারদ। খারাপ খবরে ছেঁয়ে থাকার পাশাপাশি কিন্তু মাঝেমধ্যে দেখা গেছে মন ভালো করা খবর। এর জেরে কখনো আবার নির্জীব সম্পর্ক পেয়েছে নতুন প্রাণ। তেমনি বৈশাখী এবং ইন্দ্র -এই দুজন দম্পতি থাকে বিদেশে। একদিন ইন্দ্র পরিবারের কোনও একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন নিজের দেশে আর সেখানেই লকডাউনের কারণে তিনি আটকা পড়েন। অন্যদিকে করোনার জেরে অফিসের বস তাকে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নির্দেশ দেন। কিন্তু ইন্দ্রের সার্ভিস ল্যাপটপ থাকে তার অফিসে। আর অফিসের নিয়মানুযায়ী সেটিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যায় না। ইন্দ্র তাদের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিজের বিষয় সম্পর্কে জানায়। অন্যদিকে বিদেশে কার্যত একা বৈশাখী। নিজেদের কর্মব্যস্ততার কারণে আগে থেকেই তাদের সম্পর্কে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিয়েছে একাকিত্ব। লকডাউনের জেরে প্রতি মুহূর্তে আরো বেশি অনুভব করে তারা। বৈশাখী ইন্দ্রের সমস্যার কথা জানতে পেরে সে নিজের উপায়ে ইন্দ্রের ল্যাপটপটি তাঁর অফিস থেকে আনেন।পরবর্তী ক্ষেত্রে ইন্দ্রের কাছ থেকে অফিসের ল্যাপটপের পাসওয়ার্ডটি নিয়ে ইন্দ্রের বর্তমানস্থানে ব্যবহারিত ল্যাপটপের সাথে সেটিকে কানেক্ট করে। স্বস্তি পায় ইন্দ্র ।একইসাথে নিজেদের চিড় ধরা সম্পর্ককে মেরামত করতে সক্ষম হন দুজনে। এমনি গল্প নিয়ে তৈরি পরিচালক প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী-র স্বল্প দৈর্ঘ্যের বাংলা ছবি ল্যাপটপ-এ লকডাউন ফিল্ম। কলকাতার নন্দনে শুরু হয়েছে ২৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। আর সেখানেই কলকাতা ইনফরমেশন সেন্টারে হয়ে গেল এই ছবির স্ক্রিনিং।

প্রায় ২৫মিনিটের এই ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং সাহেব চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোনালী চৌধুরী, খেয়ালী দস্তিদার,অরিন্দম গাঙ্গুলি, সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়জিৎ বন্দ্যোপাধায়, প্রদীপ ধর, ঈশান মজুমদার, পায়েল মুখোপাধ্যায় সহ অনেকে। ছবিতে অভিনয় নয়, প্রযোজকের ভূমিকাতেও রয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কাহিনীর চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং।

এদিন ছবি সম্পর্কে স্ক্রিনিং-এ উপস্থিত পরিচালক প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী জানান, লকডাউনের সময় ঘোরাফেরা করছিল নানান পরিকল্পনা। ওইসময় ঋতুপর্ণা আর আমি – একে অপরকে আমাদের লেখা শেয়ার করতে থাকি। এক দৈনিক সংবাদপত্রে আমার এই লেখাটি প্রকাশিত হয় । ঋতুপর্ণা সেটি দেখেন এবং তার খুব পছন্দ হয়। তিনি এই ছবিটি করতে রাজি হন। এই ছবিতে বিদেশে বসবাসরত অনেক শিল্পী কাজ করেছেন। শ্যুটিংয়ের সময়, তাদের সাথে যোগাযোগ এবং একইসাথে তাদেরকে দিয়ে সঠিকভাবে কাজ করানো আমার পক্ষেও চ্যালেঞ্জ ছিল।

ছবির ইউএসপি হিসাবে পরিচালক মনে করেন , ল্যাপটপের প্রেক্ষাপট লকডাউন চলাকালীন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিটি সত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত। বলা ভালো এটি এক জ্বলন্ত দলিল।

লকডাউন চলাকালীন বাড়িতে বসে ছবির শ্যুটিং। নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অভিনেত্রী সোনালী চৌধুরী জানান, প্যান্ডামিক এবং লকডাউনের জেরে প্রত্যেকের সাথে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে যায় ফলে আমরাও নিজেরা একাকিত্বে ভুগছিলাম। এখানের প্রত্যেকটি শ্যুট আমরা ঘরে বসে করেছি। প্রেমেন্দুদা এত ভালো সিনেমাটোগ্রাফার , যে উনি দূরে থেকেও প্রত্যেকটি শট আমাদের ভালোমত বুঝিয়েদিতেন। মোবাইলে শ্যুট করার সময় প্রত্যকটি বিষয় নজর রেখেছিলাম। প্রচুর কঠোর পরিশ্রম করেছি। এই ছবিটি করতে পারায় আমি খুব স্বস্তি পেয়েছিলাম।

ছবির পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহৃত গান দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়। গানের কন্ঠ এবং সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন রাঘব চট্টপাধ্যায়। গানের কথা লিখেছেন পৃথ্বীশ ব্যানার্জি।

এদিন স্ক্রিনিং -এ উপস্থিত গীতিকার পৃথ্বীশ ব্যানার্জি জানান, সিনেমায় কাজ করা হিসাবে এটা আমার প্রথম কাজ। কিন্তু এর আগে রাঘবদা এবং রূপঙ্করদার সাথে সিঙ্গেলস এবং ডাবলস অ্যালবামে কাজ করেছি। কর্মসূত্রে ইউএসএ থাকার দরুন কথাবার্তা চললেও সেইভাবে আমার সিনেমায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। ব্যক্তিগত কারণে এদেশে আসলেও লকডাউনের কারণে আমি আটকে পড়ি। একদিন হঠাৎ-ই রাঘবদা আমায় ফোন করেন। একটি সিচুয়েশন ও সুর পাঠিয়ে দেন এবং তার উপর একটি গান লিখতে বলেন। পরে আমি জানতে পারি ঋতুদি অভিনীত প্রেমেন্দুদার পরিচালিত ছবিতে এই গানটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ঋতুদি আমায় জানান, তার এই গানটির কথা ভালো লেগেছে এবং একইসঙ্গে আমার খুব প্রশংসা করেন। দর্শকের এত ভালো রেসপন্স পাবো কোনদিন ভাবিনি । বলা ভালো, লকডাউন হলো আমার স্বপ্নপূরণ।

লকডাউন চলাকালীন ঘরে বসে শর্টফিল্ম তৈরি করেছেন টলিগঞ্জের একাধিক শিল্পীই। এবার সেই তালিকায় যোগ হল মানবিক অনুভূতির ছবি ল্যাপটপ- এ লকডাউন ফিল্ম।

Author