পুল সাইডে বিপুল উচ্ছ্বাস
দেশের সাংস্কৃতিক নগরী কলকাতা। ফ্যাশান, ফিউশনের ফাটাফাটি ফুটস্টেপও। ফুরফুরে বসন্ত কিংবা গনগনে গরমেও কল্লোলিনীর ফ্যাশন কালচার আর স্টাইল স্টেটমেন্ট টক্কর দিতে পারে বিশ্বের যেকোনও শহরকে। ট্র্যাডিশনাল ধুতি-পাঞ্জাবির এথনিক লুক হোক, জিনস-জ্যাকেটের জমকালো জমিদারিতে কলকাতা ‘কুল অ্যান্ড ক্যারিশমেটিক’। এই পাঁচমিশালী পরিধেয় পথ ধরেই কলকাতা উপহার দিয়েছে চোখ ধাঁধানো, মন মাতানো সুপার মডেল, ফ্যাশান ডিজাইনারদের। দুনিয়ার সেরা ফ্যাশান শোগুলিতে এই শহরকেই গর্বিত করেছেন রোহিত বাল সব্যসাচীরা। এই শহরের মার্জার সরণিতে আগুন ছুঁইয়ে গেছেন বিপাশা বসু, সেলিনা জেঠলিদের মতো সুপার মডেলরা। ইদানিং সেই স্রোতে ভাঁটার টান। অথচ আগ্রহ আছে। খামতি নেই উৎসাহে। আছেন আকর্ষণীয় মডেল। প্রতিভা আর প্রাণ প্রাচুর্যে কলকাতার মডেল-মহল হৃদয়ে হৈ চৈ ফেলে দিতে প্রস্তুত। রেডি আধুনিক ও সাবেক সৌন্দর্য ভাবনার বিচিত্র সম্ভার নিয়ে নতুন প্রজন্মের টগবগে ফ্যাশান ডিজাইনাররাও। দরকার শুধু উপযুক্ত রাম্প ও প্ল্যাটফর্মের।স্বপ্ন বিলোনো উদ্যোগী ফেরিওয়ালাদের। সেই রকম একটি সাজানো মঞ্চ ও রাম্প সেদিন উপহার দিলেন প্রিন্স চক্রবর্তী ,অভি কুন্ডু, জ্যোতি ঘোষ ও শঙ্খ জিত মজুমদার । ফ্যাশান বিশ্বে ওঁদের পরিচয় ইভেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর উদ্যোগে নাচল, গাইল, ক্যাট ওয়াকের কেতায় কলকল করে উঠল নিউটাউনের নভোটেল হোটেলের পুল সাইডে সাউন্ড-লাইটের শিহরণ জাগানো ‘পুল পার্টি’! জলজ উচ্ছ্বাস আরও উসকে দিলেন এম টিভি রোডিস উইনার আশিস ভাটিয়া। তিনিই ছিলেন সেই সন্ধ্যার প্রধান অতিথি। উৎসাহদাতা। আয়োজনে অপরাজিতা ম্যাগাজিন, এস এস এন্টারটেইনমেন্ট, ইউ এস ই ইভেন্টস। ব্যস্ততার ফাঁকে প্রিন্স বলছিলেন, ‘কলকাতার জেড জেনারেশনের কাছে এই ধরনের ইভেন্ট কালচারগুলো খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই আবহে নতুন মডেল, ডিজাইনারদের সুযোগ করে দেওয়াই মূল লক্ষ্য। সেইসঙ্গে আশিস ভাটিয়ার মতো স্টারের সান্নিধ্য পাওয়া, ছবি তোলার সুযোগ। যেগুলো পরবর্তী বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এই ছেলেমেয়েদের কাজে লাগবে। এই ক্ষেত্রে অপরাজিতা ম্যাগাজিনে ইয়াং ট্যালেন্টদের পাতা জোড়া পোস্টার ওঁদের কেরিয়ারে জৌলুস এনে দেবে সন্দেহ নেই।‘ এই অবকাশে শহরের বেশ কয়েকটি পোড় খাওয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপগুলো একাট্টা হয়েছিল সেদিন। Attractive Gala এই নতুন প্ল্যাটফর্মটির নাম। লক্ষ্য, নতুন ধরনের সৃষ্টিশীল ও চমকপ্রদ ইভেন্টের আয়োজন করা। কিন্তু সমস্যা একটা জায়গাতেই। সম্ভাবনা থাকলেও সাহস নেই। কেন? প্রিন্সের জবাব, ‘পসিবিলিটি থাকলেও এই ধরনের ইভেন্ট কেউ করতে চায় না। কারণ, চট করে কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। এটা সত্যি, এই ধরনের ইভেন্টে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু রিস্ক কোন ক্ষেত্রে না আছে। আমাদের উদ্দেশ্য ক্ষতির ভয়ে হাত গুটিয়ে না বসে থেকে সাহস করে এগিয়ে আসা। ফ্যাশান ওয়ার্ল্ডে কলকাতার পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনা।‘ এর আগে বেশ কয়েকবার কলকাতায় এলেও দেরাদুনের ছেলে আশিস ভাটিয়া নিজেকে এইভাবে মেলে ধরার সুযোগ পাননি। আশিস গীতিকার, সুরকার, গায়কও। টানা প্রায় পৌনে একঘন্টার পারফরমেন্সে জিয়নকাঠি ছোঁয়ানোর মতো কলকাতার যৌবনে জ্বলন্ত হৃদয়-উত্তাপের উপুড় ও উজাড় করা আবেগ বিলিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন, ‘কলকাতায় শো করার জন্য এতদিন মুখিয়ে ছিলাম। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হল। শহরটার প্রতিটি স্নায়ুতে তুমুল এনার্জি। প্রতিটি মুহূর্ত এনজয় করার কায়দা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কলকাতা ফ্যাশনের শহর। ফিউশনের শহর। আবার ইমোশন আর আইডিওলজিতেও ভরপুর। আবেগে ভেসে যেতে পারে। আবার প্রতিবাদে ফেটে পড়তে পারে। এসেছিলাম নতুন প্রজন্মকে চাগিয়ে দিতে। উল্টে আমি আমার দু পকেটে ভরে নিলাম সামনের দিনে পথ চলার বিপুল রসদ।‘