বাইশে শ্রাবণে কবিগুরু স্মরণে রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি

Spread the love

পারিজাত মোল্লা

উত্তর কলকাতা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির উদ্যোগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ৮৩ তম প্রয়াণদিবস স্মরণ ও শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ১৫৩ তম জন্মদিন পালিত হল সোসাইটির নিজস্ব শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহ রথীন্দ্রমঞ্চে। সোসাইটি এই দিনটি স্মরণ ও পালন করে তিনটি স্তরে। সকাল সাতটায় সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় সংস্থার সদস্য সদস্যাদের নিয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিপ্রয়াণ কক্ষে কবির প্রতিকৃতির সামনে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে মাল্যার্পণ করেন। উপস্থিত ছিলেন বিচারক জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য্য। সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয় “আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে”। মহর্ষি ভবন প্রবেশ পথে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর আবক্ষ মূর্তিতে মালা দিয়ে প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর পর সাড়ে আটটা নাগাদ নিমতলা মহাশ্মশান ঘাটে গুরুদেবের স্মৃতিসৌধে সমাধি বেদীর উপর অর্পণ করা হয় পুষ্পসম্ভারযুক্ত মালিকা। সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য্য এবং উপস্থিত সদস্যগণ – সকলেই মালার উপর হাত রেখে অন্তরমথিত শ্রদ্ধা নিবেদন এবং প্রণাম করেন সমাধি বেদীতে মাথা ঠেকিয়ে। সোসাইটির শিল্পীদের কণ্ঠে সমবেত সুরে উচ্চারিত হয় কবিগুরু রচিত তিনটি গান – “দুঃখের তিমির যদি জ্বলে”, “নয়ন ছেড়ে গেলে চলে” এবং “মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে”। সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় রথীন্দ্রমঞ্চে বিকাল সাড়ে পাঁচটায়। বিশিষ্ট অতিথি রূপে উপস্থিত ছিলেন সুশোভন অধিকারী, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন এর প্রাক্তন অবেক্ষক এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ উৎপল চক্রবর্তী। সোসাইটির তরফে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন কার্যকরী সভাপতি ডঃ সুজিত কুমার বসু ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। বিশিষ্ট বক্তাদের ভাষণে উঠে আসে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ও শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অঙ্কনশিল্পকলা চর্চার মূল্যায়ন। প্রোজেক্টর যন্ত্রের সাহায্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বিখ্যাত ১০৭ টি ছবি মঞ্চের পর্দায় ফেলে এক একটি করে দেখানো হয় – সাথে চলে ছবিগুলির বিস্তারিত বিবরণের ভাষ্য সদস্য আদিত্য দাসের কণ্ঠে। রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় একটি ভাষ্যালেখ – “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুভাবনা”। সদস্য সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংকলনে নির্মিত ও পরিচালনায় এই পর্বে গানে অংশগ্রহণ করেন শম্পা গুহ রায়চৌধুরী, পার্থজিত সেনগুপ্ত, শিপ্রা বসু, বুলবুলি ঘোষ, ডাঃ অংশু সেন, জয়া গুপ্ত ও সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষ্যপাঠ করেন দেবাশিস বসু। আরও একটি গীতি-আলেখ্য “বোলো না সে নাই” পরিবেশিত হয় ‘প্রেরণা’ সাংস্কৃতিক সংস্থার নিবেদনে। রমা রায় হালদারের সংকলনে প্রস্তুত এই গীতি-আলেখ্যটিতে অংশগ্রহণ করেন নরেশ নন্দী, তানিয়া দাশ, স্বরূপ পাল ও রমা রায় হালদার। শ্রোতৃদর্শক পরিবেষ্টিত প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর প্রমুখ। শেষ লগ্নে সমবেত কণ্ঠে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সঞ্চালিকার ভূমিকা পালন করেন সায়ন্তী ব্যানার্জী।

Author