“ইরাবান গাথা” সকলের অনবদ্য অভিনয় মনে রাখার মতন

Spread the love


ইন্দ্রজিৎ আইচ

“শিশির মঞ্চে পরিবেশিত হলো চণ্ডীতলা প্রম্পটার এর নবতম প্রযোজনা তামিল মহাভারতের একটি মর্মস্পর্শী লোকো আখ্যান “ইরাবান গাথা”। রচনা ও নির্দেশনা – রাকেশ ঘোষ।নবম শতকের মহাভারতের তামিল অনুবাদে ‘কালাপ্পালি’ নামে এক প্রথার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথানুযায়ী, কোনো বীর যদি দেবী কালিকার সামনে নিজেকে বলি দেয়, তাহলে যুদ্ধে সেই পক্ষের জয় অবধারিত। এইখান থেকেই গল্পের সূচনা।এই প্রথা মেনেই নাকি পান্ডবপক্ষের বিজয়লাভের জন্য কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে দেবী কালিকার চরণে আত্মবলি দিয়েছিলো কনিষ্ঠ কৌন্তেয় অর্জুন ও নাগকন্যা উলূপীর ক্ষেত্রজ সন্তান ইরাবান।অকৃতদার যুবক ইরাবান শর্ত দিয়েছিলো যে সে অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে না। যৌবনের সব রঙটুকু রসটুকু উপভোগ করে তবেই সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে। কিন্তু ইরাবানকে বিবাহে ইচ্ছুক কোনো পাত্রী পাওয়া যায়নি। নিশ্চিত অকাল-বৈধব্যকে স্বীকার করতে কোনো কন্যাই রাজি হয়নি। তখন শ্রীকৃষ্ণ নারী রূপ ধারণ করে। নাম হয় মোহিনী। মোহিনী ও ইরাবানের বিবাহ হয়।

এবং ইরাবান বুঝতে পেরেছিল তাঁকে ঠকানো হয়েছে।তবুও একরাতের জন্য শয্যা সঙ্গিনী হয়ে কৃষ্ণ প্রেমে মজে গেছিল। এবং বীরের মতো মৃত্যু বরণ করেছিল।

আজকের সমসাময়িক পরিস্থিতি কে নিয়ে এই আখ্যান টি পরিবেশিত হয়েছে।রাষ্ট্রের ক্ষমতা আর ধর্মের র যাঁতাকলে কিভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নবীন যুবকদের বলী হতে হচ্ছে তা দেখানো হয়েছে এই নাটকে।নাটক জমে ওঠে।গানে, মনোমুগ্ধকর কোরিওগ্রাফির মায়াজালে এক একটি দৃশ্য হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্ত। প্রত্যেকের টানটান অভিনয় নাটকটিকে গতিশীল করে রেখেছিল। উলূপী র চরিত্রে কল্পনা বরুয়া অনবদ্য।সন্তানহারা মায়ের হাহাকার ও রঞ্জন বোসের দুই বিপরীত চরিত্র কৃষ্ণ ও মোহিনী র অভিনয় মনে দাগ কাটে। দূত চরিত্রে প্রদীপ রায় সাবলীল। ভীম চরিত্র কৌশিক মাল অর্জুন চরিত্রে কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য ও চন্ডীতলা প্রম্পটার এর একঝাঁক নতুন শিল্পীদের মঞ্চে বিচরণ বেশ সুন্দর। মঞ্চ নির্মাণে চঞ্চল আচার্য্য ও মঞ্চ স্থাপত্যে অনিলাভ চ্যাটার্জী এককথায় অতুলনীয়। আলো আবহ সংগীত এই নাটকের অমূল্য সম্পদ। চন্ডীতলা প্রম্পটারের এই প্রযোজনা উপহার দেবার জন্য প্রদীপ রায় কে সাধুবাদ জানাই।

Author